ভারতের সমন্বয়বাদী সংস্কৃতি

ভারতের সমন্বয়বাদী সংস্কৃতি (Bharater Samanbayabadi Sanskr̥ti): Synergistic culture of India.

ভারতীয় জীবনধারায় সুদূর অতীতকাল থেকে বহু বিদেশির জীবনধারা মিশ্রিত হয়ে এসেছে। সকল জাতিকেও ভারত আপন করে নিয়েছে। কিন্তু মুসলিমরা তার ব্যতিক্রম ছিল। তারা সকলেই একটি সুনির্দিষ্ট ধর্ম, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান এবং সাহিত্য সংস্কৃতিকে বহন করেই এদেশে এসেছিল।

সমাজগত ও ধর্মগত দুই দিক: প্রথমদিকে, রাজনৈতিক বিরোধের পাশাপাশি হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে সমাজগত ও ধর্মগত দুই দিক থেকে সংঘাত মাঝে মাঝে ঘটত। কর্মগত সংঘাতের প্রধান কারণই ছিল হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য। ইন্দুদের বর্ণাশ্রম প্রথা ও ইসলামের গণতান্ত্রিক আদর্শের মধ্যে ছিল বিস্তর ফারাক। তার মঙ্গো বিজয়ী মুসলমানদের ‘বিজয় গর্বের আস্ফালন অনেকটাই প্রবল ছিল।

সুলতানি যুগে সমন্বয়ের সংস্কৃতি

ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবে ভীত হিন্দুসমাজ অনেকাংশে রক্ষণশীল হয়ে উঠতে থাকে। হিন্দু সমাজের নীতিপ্রবত্তারা স্মৃতিশাস্ত্রের নতুন নতুন ব্যাখ্যা করে হিন্দুসমাজের বর্ণভেদ রথাকে কঠোর থেকে কঠোরতর করে তোলেন। কিন্তু যখনই দুটি সভ্যতা পরস্পরের ঘনিষ্ঠ সংস্রবে আসে, তখন উভয়েই পরস্পরের দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকে। ভারতে গড়ে কঠা সুলতানি শাসনকাল থেকেই তা পরিলক্ষিত হতে থাকে।

সহনশীলতা ভাবের উদ্ভব: দীর্ঘকাল পাশাপাশি সহাবস্থানের ফলস্বরূপ হিন্দু ও সেলিম এই দুই সংস্কৃতির মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা ভাবের উদ্ভব হতে দেখা যায়। মুসলিম মনীষী আলবিরুনি সংস্কৃত ভাষায় শিক্ষালাভ করে উপনিষদ পাঠে চন দেন। উপনিষদের একেশ্বরবাদ এবং ইসলাম ধর্মের একেশ্বরবাদের সামঞ্জস্য প্রত্যক্ষ করে মুসলমান সমাজ ক্রমশ হিন্দু ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে।

পারস্পরিক সংস্কৃতি গ্রহণে আগ্রহ: কাশ্মীরের জয়নাল আবেদিন ও বাংলার হ্রসেন শাহের রাজদরবারে হিন্দু সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করার ও অনুবাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সেলিম সম্প্রদায় হিন্দুদের বেদান্ত, যোগবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিদ্যায় উৎসাহী হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, হিন্দুরা মুসলমানদের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ গণনা, মূলপঞ্জি, ‘তাজিক’ নামে জন্মপত্রিকা বা কোষ্ঠী, ওষুধ ও রসায়নশাস্ত্রে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

উর্দুভাষার উৎপত্তি: হিন্দু ও মুসলিম সংস্কৃতি সমন্বয়ের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল ফারাসি আরবি ও তুর্কি শব্দের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা নতুন উর্দু ভাষা। আবার মালিক মহম্মদ জায়স আরানীকে নিয়ে আখ্যান রচনা করতে আগ্রহী হন ঠিক, তেমনি হিন্দুরাও ফারসি ভাষায় মুসলিম ঐতিহ্যকে সম্বল কবে রুনা করতে থাকেন। আমির খসরু বহু হিন্দি সাহিত্য প্রণয়ন করেন। *পারস্পরিক আদান-প্রদান: হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কার

* পারস্পরিক কোন এই পারস্পরিক আদান-প্রদানের বিষয়টি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হতে থাকে। হিন্দু ও মুসলিম শাসকেরা উভয় সম্প্রদায়ভুক্ত লোককেই রাজকার্যে নিযুক্ত করতেন। মালবে চান্দেরির মেদিনী রায় ও বাংলায় হুসেন শাহের প্রশাসনে পুরন্দর খান, রূপ ও সনাতন নিযুক্ত হতে থাকেন। বিজাপুরের ইউসুফ আনিস শাহ হিন্দুদের রাজকার্যের দায়িত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করতেন। একইভাবে রাজপুত বীর রান কসঙ্গ পরাজিত শত্রু মালবের দ্বিতীয় মামুদকে স্বাধীনতা দান করেন।

* সম্প্রীতির ভাব: শিল্পকলা, চিত্রকলা এবং সংগীতেও এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশ সম্প্রীতির ভাব দেখা যেত। মুসলমানের সত্যপির হিন্দুর দ্বারা সত্যনারায়ণ রূপে পূজিং ও হতে থাকেন। এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে নিহিত থাকা সম্প্রীতির ভাব দেখে স্যার জন মার্শাল বিস্ময়প্রকাশ ও প্রশংসা করেছেন।মোগল যুগে সমন্বয়ের সংস্কৃতি

সমন্বয়বাদী কার্যধারা: মোগল যুগেও হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয়বার কার্যধারা অব্যাহত থাকতে দেখা গেছে। মোগল সম্রাট আকবর হিন্দু ও মুসলমানের মধে সমন্বয়সাধনের বিশেষ চেষ্টা করেন। ফতেপুর সিক্রির ইবাদতখানায় নানা ধর্মো আলোচনা থেকে সম্রাট আকবর উপলব্ধি করেন যে, সকল ধর্মই সার ও অসার উত্ত্য উপাদান-সমৃদ্ধ। তিনি রাজপুতদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং তাদের নিজের দরবারে উচ্চ রাজপদে নিয়োগ করেন। এর ফলে মোগল-রাজপুত মৈত্রী সম্পরঅতি নিবিড় ভাবে গড়ে ওঠে।

* মোগল রাজসভা: মোগল আমলে পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ, স্থাপতা উ সংগীত প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমন্বয়বাদী প্রচেষ্টা সুন্দরভাবে পরিলক্ষিত হয়। আবুল ফজল যে ১৭ জন শিল্পীর নাম করেছেন তার মধ্যে মাত্র ৪ জন মুসলমান সম্প্রদায়ের ছিলেন। ‘ওয়াকিয়াৎ-ই-বাবুরিতে যে ২২জন শিল্পীর উল্লেখ আছে তার মধ্যে ১৯ জনই আম ছিলেন হিন্দু বাকি ৩জন ছিলেন মুসলমান। বস্তুত মোগল রাজসভা ছিল সর্বধর্ম সমন্বয়ের ক্ষেত্র।

* সমন্বয়বাদী নিদর্শনের প্রতীক: আবার বিখ্যাত শিল্পকীর্তি তাজমহল ছিল না হিন্ না মুসলিম স্থাপত্য, অর্থাৎ ভারতীয় সমন্বয়বাদী নিদর্শনের প্রতীক ‘তাজমহল’। কেমব্রিংকা ঐতিহাসিকগণ স্থাপত্য শিল্পে সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টাকে বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন। মোগল স্থাপত্যের মূল ভারতীয় রীতির মধ্যেই গ্রথিত ছিল বলে ঐতিহাসিক হ্যাভেল মনে করেছেন।

* স্বতন্ত্র চিত্রশিল্প: শুধু তাই নয়, চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে ভারতীয় চিত্ররসের সঙ্গে পারসিক চিত্ররসের সমন্বয় সাধনের ফলে এক স্বতন্ত্র চিত্রশিল্প গড়ে ওঠে। মোগল রাজদরবার ছিল হিন্দু, পারসিক, তুরানি, কাশ্মীরি প্রভৃতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংগীত-সাধকের মিলনক্ষেত্র।

সাহিত্যের উন্নতি: সাহিত্যের মধ্যে দিয়ে সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টাও মোগল যুগ থেকেই সূচিত হয়েছিল। বদাউনি রামায়ণের অনুবাদক ছিলেন। অথর্ববেদকে ফারসি ভাষায় ভাষান্তর করেন হাজি ইব্রাহিম সরহিন্দি। হিন্দি কাব্যে আকবরের অত্যধিক আগ্রহের ফলে এই সাহিত্যের বেশ উন্নতি সাধিত হয়। বীরবল ও মানসিংহের মতো লেখকেরা মোগল যুগে হিন্দি সাহিত্যকে বেশ পরিপুষ্ট করে তোলেন। বাস্তবিক মোগল যুগেই বিভিন্ন ভাবে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আশ্চর্যজনক পারস্পরিক সহাবস্থান গড়ে ওঠে।

☆সুফি আন্দোলন খ্রিস্টীয় নবম-দশম শতকে ইসলামধর্মে এক সংস্কারকামী উদার আন্দোলন পরিলক্ষিত হয়। এই আন্দোলনই ইতিহাসে ‘সুফিবাদ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

* সুফি শব্দের অর্থ: বিভিন্ন জনে বিভিন্ন অর্থে ‘সুফি’ শব্দটিকে ব্যাখ্যা করেছেন। কারও মতে, ‘সুফি’ শব্দটি আরবি শব্দ ‘সুফ’ থেকে আগত হয়েছে। এই সুফ শব্দের অর্থ হল পশম বা উল। যাঁরা এই পশমের বা উলের পোশাক করতেন তাঁদেরই সুফি বলা হত। তবে সুফি বলতে অনেকে ‘সাদা’ বা পবিত্রতাকে উল্লেখ করেছেন। ‘সাফ’ বা সারিকধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের মধ্যে প্রধান কথাটি থেকেও সুফি শব্দটির উদ্ভব ঘটেছে বলে অনেক ঐতিহাসিকের অনুমান।

* ‘সুফি’ শব্দের উৎস: ‘সুফি’ শব্দটির অর্থ যাই হোক না কেন, এর উৎস হল কোরান ও হজরত মহম্মদের বাণীপ্রসূত। হজরত প্রচার করেন যে, ঈশ্বরকে লাভ করার অন্যতম উপায় হল সংযম। কিন্তু তাঁর দেহত্যাগের পরবর্তীকালে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সংযমের অভাব পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের গোঁড়ামি এই ধর্মকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এতে ভাবিত হয়ে কিছু সংস্কারক ইসলাম ধর্মের যথার্থ তত্ত্ব প্রচার করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তাই তাঁদের আন্দোলনকে অনেকেই প্রতিবাদী আন্দোলন বলে মতপ্রকাশ করে থাকেন।

* সুফি মতবাদ: ভক্তিবাদী হিন্দুধর্ম-প্রচারকদের মতো মুসলমান সুফি সাধক ও ফকিররাও হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংযোগের সেতু রচনা করেছিলেন। খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দী থেকেই ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের ভাব সাযুজ্য এবং মানুষে মানুষেসমতার আদর্শ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যা সুফি মতবাদ নামে পরিচিত।

সুফি বাদের উদ্ভব: সুফিবাদ হল একপ্রকার রহস্যবাদী মতবাদ। এই মতবাদের উৎস হলেন হজরত মহম্মদ এবং তাঁর বাণী সম্বলিত পবিত্র কোরান। ইসলাম ধর্মের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ সুফিবাদের উদ্ভব হয়। সুফি সাধকগণ ঈশ্বরপ্রেম এবং ভত্তির ওপরজোর দেন এবং বলেন যে, প্রেমই হল ঈশ্বর ও মানবের মধ্যে মিলনের যোগসূত্র।

আল গাজানির প্রচার: একাদশ শতাব্দীর আর এক অবিসম্বাদী সাধক ছিলেন আ এবং সুফিদের অতীন্দ্রিয় ভাবের মধ্যে সাধনের চেষ্টা করেন। তিনি প্রচার করেন যে যুক্তি দিয়ে ঈশ্বর ও তাঁর মহিমার সমার উপলব্ধি হয় না। ঈশ্বরের প্রতি ভত্তি ও ভালোবাসার মাধ্যমেই ঈশ্বর মানুষের মাঝে প্রশ্না হন। তখনই মানুষ ঈশ্বরীয় মহিমা উপলব্ধি করে। আবার যেহেতু কোরান হল ঈশ্বরের বাণী সেহেতু রহস্যবাদীদের কাছে কোরান অপরিহার্য।

* সুফি সাধকবৃন্দ: আল গাজানির এই সমন্বয়বাদী মতবাদের জন্য তিনি গোঁড়া মুসলি ও সুফি সাধক সবার শ্রুধার পাত্র ছিলেন। সমসাময়িক এবং পরবর্তীকালের সাদী, হাফিয় বুমী, ওমর খৈয়াম, আমির খসরু প্রমুখ উদারপন্থী পারসিক কবিদের রচনায় সুদি মতবাদের পূর্ণ প্রতিফলন দেখা যায়। হিন্দু ভক্তিবাদীরা যেমন ইসলামের দ্বারা কিছুট প্রভাবিত হয়েছিলেন, মুসলিম সুফি সাধকরাও তেমন ভারতীয় চিন্তা, ভাবধারা বিশেষা বেদান্ত মতবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এই সকল মুসলিম সন্তের মধ্যে যাচ মুইনউদ্দিন চিন্তি, নিজামউদ্দিন, আউলিয়া, শাহ জালাল প্রমুখের নাম স্মরণীয়।

* সুফি সন্তের আত্মপ্রকাশ: মুইনউদ্দিন ১১৯২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কোনো একসময় ভারতে আসেন। দিল্লিতে কিছুকাল কাটাবার পর তিনি আজমীরে যান। তিনি ভারতে চিন্তি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। মুইনউদ্দিনকে কেন্দ্র করে একদল মুসলিম সুফি সং আত্মপ্রকাশ করেন। এঁদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা খ্যাতি অর্জন করেন নিজামউদ্দিন আউলিয়া। পান্ডিত্য, সরলতা ও ধর্মীয় সহিহ্বতার জন্য তিনি হিন্দু মুসলমান সব সম্প্রদায়ের শ্রব অর্জন করেছিলেন। হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। আলাউদ্দিন খলজি নিজামউদ্দিনের অনুরাগী ছিলেন। তাঁর প্রতি অনুরণবশত তিনি নিজামউদ্দিনের দরগায় মসজিদ নির্মাণ করেন।

* গুরু শিষ্যের সম্পর্ক: হিন্দুধর্মের মতো সুফি ধর্মেও গুরু শিষ্যের সম্পর্কের ওপ গুরুত্ব আরোপ করা হত। সুফি গুরুকে বলা হত ‘পীর’ বা ‘শেখ’। এঁদের কেন্দ্র করে সুফি সন্ন্যাস জীবন গড়ে উঠত। গুরুর প্রতি ঐকান্তিক আনুগত্য, সব জীবে দয়া এবঈশ্বরের কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ এই হল সুফি মতবাদের মূল কথা।

* ‘সুহরাবাদী সম্প্রদায়’: ভারতে সুফিদের আর একটি শাখা ছিল ‘সুহরাবাদী’ সম্প্রদায় এঁদের কার্যকলাপ পাঞ্জাব ও মূলতান অঞ্চলে সীমাকধ ছিল। সন্ত শিহাবউদ্দিন সুহরাবান এবং হামিদ-উদ্দিন নাগোবী এই সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ছিলেন। এঁরা অন্যান্য সুফি সন্তের মতো কঠোর সংযম ও অনাড়ম্বর জীবনযাত্রায় বিশ্বাসী ছিলেন না। সচ্ছল জীবনযাত্রারমাধ্যমে ভগবৎ উপাসনা ছিল এঁদের আচরণীয় কর্মপন্থা।

* হিন্দু-মুসলিম ভাবধারা: পরবর্তীকালে আউল বাউল ফকির, সাঁই সম্প্রদায়ও ভাব ভত্তি ও ভালোবাসার মাধ্যমে ঈশ্বরের আরাধনা এবং ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে সম্পন স্থাপনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তাঁদের মতে ভগবানকে ভালোবেসে তার কাছে পৌঁছান যায়। মুসলমানরা তো বটেই, অগণিত হিন্দু আজও এই সাধু ও ফকিরানদরগায় ‘সিগ্রী’ দেয় এবং নানা মানত করে। সত্যপীর ও অন্যান্য পীরের পূজা, পীরের প্রান গ্রাম্যগীতি ও লোকগাথা প্রভৃতি লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতিতে হিন্দু-মুসলিম ভাবধারার সুস্পষ্ট চিহ্ন বর্তমান।

হিন্দু-মুসলিম সাংস্কৃতিক ঐক্য: হিন্দুদের সত্যনারায়ণ পুজায় আজও অন্তত একজন ‘মোমিন’ বা মুসলমানের নিমন্ত্রণ ভারতে হিন্দু-মুসলিম সাংস্কৃতিক ঐক্যের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। ভারতে আরও এমন অনেক ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠান আছে, যেগুলিতে হিন্দু- মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ ভক্তিভরে যোগদান করেন।

ধর্মীয় উদারনীতি: এভাবে ভারতের ধর্ম সমন্বয়ের ইতিহাসে সুফি মতবাদের যথেষ্ট অবদান আছে। স্বয়ং সম্রাট আকবর সুফি মতবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধর্মীয় উদারনীতি গ্রহণ করে ভারতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পথ প্রশস্ত করেছিলেন।